ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

লুটপাট চলছে! মগনামা-কুতুবদিয়া দরবার নৌ রুটে খাস কালেকশনের টাকা

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা লঞ্চঘাট থেকে কুতুবদিয়া চ্যানেল হয়ে লেমশীখালী মালেক শাহ দরবার ঘাট পারাপারের একমাত্র নৌরুটে গত সাত মাস ধরে খাস কালেকশনের নামে প্রতিদিন উত্তোলিত সিংহভাগ টাকা লুটেপুটে খাচ্ছে স্থানীয় একটি অসাধু সিন্ডিকেট! ফলে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এভাবে সরকারী টাকা লুট হলেও রহস্যজনক নিরবতায় রয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

অন্যদিকে সরকারি টাকা মেরে লাভবান হচ্ছে স্থানীয় অসাধু সিন্ডিকেট। স্থানীয় কিছু অসাধু লোকজনের অপতৎপরতার কারণে চলতি বাংলা বছরের শুরুতে মগনামা লঞ্চঘাট- কুতুবদিয়ার লেমশীখালী মালেক শাহ দরবার ঘাট পারাপারের নৌরুটটি ইজারা হয়নি। আর এ সুযোগে মগনামার একটি অসাধু সিন্ডিকেটের সদস্যরা খাস কালেকশনের নামে ‘অভিনব কৌশলে’ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনোরকম মাথা ব্যথা নেই! কর্তৃপক্ষের এহেন উদাসিনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, চলতি বাংলা সালে মগনামা ঘাট থেকে কুতুবদিয়া চ্যানেল হয়ে কুতুবদিয়ার লেমশীখালী দরবার ঘাট পারাপারের একমাত্র নৌরুটটি নানা জটিলতার কারণে ইজারা হয়নি। বিগত বছরগুলোতে ওই নৌরুট ইজারা হতো প্রায় কোটি টাকার ওপরে। প্রতি বছর বাংলা মাসের শুরুতে ওই নৌরুটটি পরবর্তী এক বছরের জন্য ইজারা হলে সরকার ইজারাগ্রহীতার কাছ থেকে ভ্যাটসহ প্রায় কোটি টাকার ওপরে রাজস্ব পেত। কিন্তু চলতি বছর ঘাটটি ইজারা না হওয়ায় সরকার মোটা অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার ব্যস্ততম নৌরুট হচ্ছে মগনামা লঞ্চঘাট টু কুতুবদিয়া দরবার নৌরুট। এ রুট দিয়ে প্রতিদিন হাজার মানুষ স্পিডবোট ও ড্যানিস বোট নিয়ে পারাপার করে। ড্যানিস বোটে পারাপারের সময় প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে ৩০-৬০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। আর অন্যদিকে স্পিডবোটে যাতায়াতে প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে ১০০ টাকা আদায় করা হয়। মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রেও গলাকাটা পরিবহন খরচ আদায় করা হয়। আর পারাপার ও মালামাল পরিবহনের টাকা মগনামা লঞ্চঘাটে আদায় করা হয়। স্থানীয় কয়েকজনের একটি সিন্ডিকেট গত সাত মাস ধরে মগনামা লঞ্চঘাট দিয়ে দরবার ঘাটে পারাপারে যাত্রীদের কাছ থেকে খাস কালেকশনের টাকা আদায় করছেন। প্রতিদিন প্রায় এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত খাস কালেকশনের টাকা আদায় করা হলেও পেকুয়া সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মাধ্যমে তারা শুধু ১০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে থাকে। গত সাত মাস ধরে খাস কালেকশন আদায় করার সময় কোনো দিনই পেকুয়া সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মগনামা লঞ্চঘাটে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকিটের নিয়ন্ত্রণে খাস কালেকশনের টাকা উত্তোলন করছে। আর এসব টাকা ওই সিন্ডিকেটই ভাগ-বাটোয়ারা করে প্রতিনিয়তই গিলে খাচ্ছে। এভাবে সরকারি খাস কালেকশনের টাকা প্রতিনিয়তই লুটপাট হলেও এ নিয়ে কোনো ধরনের মাথা ব্যথা নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

মগনামা ঘাটে খাস কালেকশনের টাকা উত্তোলনকারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভূমি অফিস থেকে তিনি টাকা উত্তোলনের জন্য দায়িত্ব নিয়েছেন। খাস কালেকশনের টাকা লুটপাটের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোনো ধরনের কথা বলতে রাজি হননি।

তবে পেকুয়া সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, মগনামা লঞ্চঘাটে কাউকে খাস কালেকশনের টাকা উত্তোলনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

মগনামা টু কুতুবদিয়া দরবার নৌরুটের পাটনী মো. মকছুদ মিয়া অভিযোগ করে জানান, গত সাত মাস ধরে খাস কালেকশনের নামে উত্তোলিত বেশিরভাগ সরকারি টাকা গনিমতের মালের মতো স্থানীয় একটি অসাধু সিন্ডিকেট লুটপাট করছে। খাস কালেকশনের সময় পেকুয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত থাকেন না। ভূমি অফিসের লোকজনের অনুপস্থিতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট মগনামা লঞ্চঘাট থেকে উত্তোলিত সরকারি খাস কালেকশনের টাকা দেদারসে লুটে নিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। খাস কালেকশনের সময় ভূমি অফিসের লোকজনের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মকছুদ মিয়া।

এ বিষয়ে পেকুয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার কাজল কুমার শীলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সদ্য বদলি হওয়া ইউএনও মগনাম টু কুতুবদিয়া দরবার ঘাট নৌরুটে পারাপারে যাত্রীদের কাছ থেকে খাস কালেকশনের টাকা উত্তোলনের জন্য মগনামার কয়েকজন লোককে দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন তিনি এতটুকু জানেন।

পাঠকের মতামত: